ভূমিকা:
সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অমূল্য নিয়ামত ও পরীক্ষা। কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানরা কেবল পরীক্ষা।” (সূরা আত-তাগাবুন ৬৪:১৫)
অতএব, সন্তানকে শুধু ভালোবাসা নয়, বরং সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিয়ে নেককার বানানো প্রতিটি পিতামাতার ঈমানি দায়িত্ব।
১. সন্তান আল্লাহর আমানত:
কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি মানুষ ও পাথর।” (সূরা আত-তাহরিম ৬৬:৬)
এই আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে, পিতা-মাতার দায়িত্ব সন্তানদেরকে ঈমান, ইবাদত ও সৎকাজের পথে গড়ে তোলা।
 
২. নামকরণ ও প্রথম শিক্ষা:
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সুন্দর নাম দাও।” (আবু দাউদ)
একটি অর্থবহ ও সুন্দর নাম শুধু পরিচয়ের মাধ্যম নয়, বরং শিশুর ব্যক্তিত্ব ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়া, নবজাতকের কানে আজান দেওয়া, তাহনীক করা, এবং শৈশব থেকেই আল্লাহর নাম শেখানোই আধ্যাত্মিক Parenting-এর সূচনা।
 
৩. তাওহিদ ও ঈমান শিক্ষা:
হযরত লুকমান (আ.) তাঁর সন্তানকে উপদেশ দিয়েছিলেন:
“হে আমার সন্তান! আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক মহা অন্যায়।” (সূরা লুকমান ৩১:১৩)
শিশুর ঈমানের ভিত্তি তৈরি হয় ছোটবেলা থেকেই। পিতা-মাতা যদি সন্তানকে তাওহিদের শিক্ষা দেন, তবে তাদের জীবনের সব আমল সঠিক পথে এগোয়।
 
৪. ভালোবাসা ও দয়া:
রাসূল ﷺ শিশুদের প্রতি অসীম ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন।
তিনি বলেছেন:
“যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (তিরমিজি)
👉 তাই শিশুকে মারধর, অবহেলা বা হেয় না করে ভালোবাসা, স্নেহ ও দয়ার মাধ্যমে গড়ে তোলা চাই। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস ও নৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
 
৫. আদব ও আচার শিক্ষা:
রাসূল ﷺ বলেছেন-
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সম্মান কর এবং তাদেরকে উত্তম আচার-আচরণ শিক্ষা দাও।” (ইবনে মাজাহ)
শিশুদের শুধু তথ্য নয়, বরং সত্যবাদিতা, ধৈর্য, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, বিনয় ইত্যাদি নৈতিক গুণ শেখানো জরুরি।
 
৬. শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চা:
কোরআনের প্রথম ওয়াহি-
“পড়ো, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আল-আলাক ৯৬:১)
পিতা-মাতার দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে উভয়কেই দ্বীনি ও দুনিয়াবি উভয় জ্ঞান শেখানো। কারণ জ্ঞান ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না এবং সমাজেও সঠিক অবদান রাখা যায় না।
 
৭. শারীরিক ও মানসিক বিকাশ:
রাসূল ﷺ বলেছেন-
“তোমার শরীরেরও তোমার উপর হক আছে।” (বুখারি)
শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার, খেলাধুলা, বিশ্রাম এবং মানসিক প্রশান্তি জরুরি। সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের বিকাশ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ Parenting সম্ভব নয়।
 
৮. শাসন ও শৃঙ্খলা:
পিতা-মাতা শুধু ভালোবাসা দেবেন না, বরং ন্যায়সঙ্গত শাসন ও শৃঙ্খলা শেখাবেন।
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজ শিক্ষা দাও এবং দশ বছর বয়সে না পড়লে (সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে) শাসন করো।” (আবু দাউদ)
এটি শাসনের কঠোরতা নয়, বরং ধারাবাহিকভাবে শিশুদের মধ্যে দ্বীনি দায়িত্ববোধ তৈরি করা।
 
৯. আধুনিক Parenting-এর চ্যালেঞ্জ:
আজকের যুগে শিশু লালন-পালন শুধু পরিবারেই সীমাবদ্ধ নয়; সোশ্যাল মিডিয়া, প্রযুক্তি, স্কুল পরিবেশ ও সমবয়সীদের প্রভাব অনেক বেশি।
পিতা-মাতাকে সজাগ থাকতে হবে সন্তানদের অনলাইন কার্যকলাপ, বন্ধুবান্ধব ও পরিবেশের প্রতি। ইসলামী Parenting মানে শুধু দোয়া নয়, বরং সন্তানকে সঠিক পরিবেশে রাখা।
 
উপসংহার:
ইসলামে Parenting শুধু সন্তানকে বড় করা নয়, বরং আল্লাহর আমানত রক্ষা করা। সঠিক Parenting-এর মাধ্যমে একটি পরিবার শুধু দুনিয়াতে নয়, আখেরাতেও কল্যাণ লাভ করতে পারে।
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল চলমান থাকে: সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা থেকে উপকৃত হওয়া যায়, এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।” (মুসলিম)
অতএব, একজন সন্তানকে নেককার করে গড়ে তোলাই সর্বশ্রেষ্ঠ Parenting।
 
🕌 কোর্স ডেসক্রিপশন:
“তালিমুস সুন্নাহ একাডেমী” নিয়ে এসেছে বিশেষ কোর্স “ইসলামিক Parenting: কোরআন ও হাদিসের আলোকে সন্তান লালন-পালন”।
এই কোর্সে পিতা-মাতাকে শেখানো হবে কীভাবে সন্তানকে আল্লাহর আমানত হিসেবে লালন-পালন করতে হয়—ভালোবাসা, দয়া, শৃঙ্খলা ও সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে।
 
📚 এখানে আলোচনা করা হবে:
সন্তানের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানসিক বিকাশ
তাওহিদ ও ঈমান শিক্ষা
আদব-আচার ও ইসলামী মূল্যবোধ
আধুনিক Parenting-এর চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
✨ আমাদের লক্ষ্য—একটি নেককার প্রজন্ম গড়ে তোলা, যারা হবে সমাজ ও উম্মাহর জন্য কল্যাণের উৎস।
									
									
									SHARE